প্রোগ্রামিং কি ও কেন শিখব ? পার্টঃ ১

Programming এই কথাটি শুনলেই মাথার ভেতর অনেক জল্পনা-কল্পনা শুরু হয় । কারো কাছে আবার মনে হয় Rocket Science । আর বেশিরভাগ লোক বোঝেই না Programming জিনিসটা আসলে কি । আর তাই এই বিষয়ে সবাইকে ধারণা দিতেই আজকের এই পোস্ট। আচ্ছা এক কাজ করি বিস্তারিত কথায় যাওয়ার আগে কিছু উদাহরন দেই।

আমরা সকলেই Google, Microsoft, Apple, Yahoo ইত্যাদি অনেক কোম্পানির নাম জানি কারণ তারা সারা বিশ্বে জনপ্রিয় আর অন্যতম সম্পদশালী কোম্পানি । মজার ব্যাপার হলো এইসব কোম্পানি আজ এত বড় অবস্থানে আসতে পেরেছে তার পেছনে রয়েছে Programming এর অবদান । এখন মাথায় আসতে পারে কিভাবে ? তার উত্তর ও দিয়ে দিচ্ছি ।

আমরা সকলেই Android Operating System যুক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছি আর না হলেও অন্তত চিনি । এই Android কিন্তু আবিষ্কার করেছে Google এর Programmer-রা । এখন চিন্তা করি সারা পৃথিবীতে কতগুলো Android Smartphone আছে আর কত টাকা পাচ্ছে তাও একবার চিন্তা করি । আবার Windows Operating System ও আমরা চিনি বা নাম শুনেছি । Microsoft এর প্রতিষ্ঠাতা William Henry Bill Gates বা Bill Gates এই অপারেটিং সিস্টেমটি বানিয়েছেন কয়েকজন প্রোগ্রামার এর সাথে । আর Windows তো এখন পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় Operating System আমরা সকলেই জানি । আর এর ফলে তিনি বেশ অনেক বছর পৃথিবীর সবচেয়ে সম্পদশালী ব্যক্তি ছিলেন । বুঝতেই পারছি সফল প্রোগ্রামারদের স্থান কোথায় । প্রোগ্রামার হয়ে উপার্জন করতে যে বড় কোম্পানিতে চাকরি করতে হবে বা নিজের বড় কোম্পানি থাকতে হবে তা নয় ।

Space X এর প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্ক (Elon Mask) যার মোট সম্পদ ২২.৮ বিলিয়ন (ডিসেম্বর ২০১৮) কিন্তু তার Space X প্রতিষ্ঠার অনেক আগেই মাত্র ১২ বছর বয়সে তার বানানো গেম বিক্রি করে ৫০০ ডলার আয় করেন ।

একবার ভেবে দেখুন তারা কেউ কিন্তু এই অবস্থানে আসতে পারতেন না যদি না তারা ভালো করে প্রোগ্রামিং শিখতেন ।

এখন আপনাদের অনেকের হয়তো মনে হচ্ছে প্রোগ্রামিং জিনিসটা আসলে কি বা হয়তো আপনি জানেন তা খুব ই সামান্য তাই আপনাদের বিস্তারিত জানতে মন চাচ্ছে । তো চলুন জানা যাক ।

আমাদের মাতৃভাষা বাংলা অনেকের ইংরেজি বা ফারসি ইত্যাদি ইত্যাদি । আমরা কিন্তু এই ভাষা ছাড়া কোন কাজই করতে পারতাম না । এটা নিয়ে যদি প্রশ্ন আসে যে কেন পারতাম না তাহলে নিজেই একবার ভালো করে ভেবে নিন উত্তর পেয়ে যাবেন । এখন Programming বা Coding কে ওই রকম Computer এর ভাষা বলা যেতে পারে । কম্পিউটারে কোন কাজ করতে গেলে কম্পিউটারকে আগে বুঝতে হয় যে সে কি করবে আর এই বোঝার কাজটি করে Programming Language । চলুন একটা উদাহরণ দেই তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে কিছুটা ।

মনে করি আমরা মোবাইলে বা কম্পিউটারে Calculator চালু করে 8+3 এটা লিখে = চেপে দিলাম উত্তর জানার জন্য । কিন্তু কম্পিউটারের তো আর নিজস্ব বুদ্ধি নেই যে সে এটা করবে তাকে আগে শিখিয়ে দিতে হবে , এখন কম্পিউটার তো আমাদের মতো বাংলা বা ইংরেজী বোঝে না তাহলে এখন উপায় কি ………!!!!!!! এতো মহা ঝামেলা কিন্তু না আসলে এই সমস্যা সমাধান করার জন্যই রয়েছে Programming । একজন প্রোগ্রামার এই সমস্যা হবে জেনে আগেই আমাদের মোবাইল বা কম্পিউটারকে Programming Language ব্যবহার করে যোগ করা শিখিয়ে দিয়েছেন । আর তাই যখন আমরা যোগ করতে চাই তখন কম্পিউটার তাকে শেখানো প্রোগ্রাম ব্যবহার করে আমাদের যোগফল বের করে দেয় মুহূর্তের মধ্যে । একটা কথা ভেবে দেখুন কম্পিউটার কিন্তু বানানো হয়েছিলো হিসাব করার জন্য আর প্রোগ্রামাররা যদি হিসাবের কাজটি কম্পিউটারকে শিখিয়ে না দিতেন তাহলে হয়তো আমরা আজকের এর কম্পিটারকেই পেতাম না । প্রোগ্রামিং নিয়ে যখন বলছি তখন বর্তমানে প্রচলিত কিছু প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের নাম বলি আপনাদের কাজে দিতে পারে । বর্তমানে প্রচলিত কিছু প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ  হলোঃ- C, C++(সি প্লাস প্লাস) , C # (সি শার্প), Python, Java, Swift, Kotlin, PHP, Ruby ইত্যাদি ।

এখন চলুন আরেকটা উদাহরন দেয়া যাক । প্রযুক্তি এখন সব ক্ষেত্রেই রয়েছে । আজকাল ফ্যাশনেও অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে যেমন হাতঘড়ির বদলে Smart Watch, Health Band ইত্যাদি অনেক কিছুই । তো কয়েক বছর পর যে পোশাকও স্মার্ট হয়ে যাবে তা অকল্পনীয় কিছু নয়। যেমন, ওয়ার্কআউট ক্লথ এর আবিষ্কার যেটা আপনার ফিটনেস ডাটা কালেক্ট করবে, শরীরের চাহিদা অনুযায়ী তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে। স্মার্ট শার্ট যেটা আপনার শরীর এর জীবাণু, পিএইচ মান আর ঘাম শুকিয়ে আপনাকে ফ্রেশ রাখবে অথবা ধরুন, প্রোগ্রাম করা একটা এপ দিনের তিনবেলা আপনার কাপড় থেকে তিন ধরনের পারফিউম ছড়াবে। এই সব কিছুই কিন্তু কোডিং দ্বারা করা সম্ভব ।

তো মনে করেন সেই রকম সময়ে যখন স্মার্ট পোশাক এর ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে তখন ২ জন ব্যক্তি একটা টেক্সটাইল কোম্পানীতে ভাইভা দিতে গেছে । একজন কোডিং পারে আর একজন পারে না । তখন কোম্পানী কিন্তু কোডিং পারা লোকটিকেই নিবে কারণ তখন পোশাক কারখানাতে কোডিং দরকার হবে ।

তো এখন কোডিং যে শুধু কম্পিউটার সায়েন্স পড়ে এমন ছাত্রদের দরকার তা কিন্তু নয় । ভবিষ্যতে ভালোভাবে চলতে সবারই দরকার কোডিং জানা ।  যেমন বর্তমানে আমাদের অনেকের বাবা - মার প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান কম থাকায় যারা জানে তাদের উপর নির্ভর করতে হয় । আমাদের ও যেন এমন পরিস্থিতিতে না পড়তে হয় সে জন্য হলেও উচিত কোডিং শেখা । 

এ নিয়ে আরো বিস্তারিত বলবো পরবর্তী পার্টে । এখন আর লেখাকে বড় করবো না ।

তবে আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে ২১ শতক কিন্তু পুরোপুরি প্রযুক্তি নির্ভর আর তাই আমাদের এই সময়ে ভালভাবে বাঁচতে হলে দরকার সময়ের সাথে নিজেদের আপডেট রাখার । 

শিল্প বিপ্লবে অংশ নিতে পারিনি বলে আমরা ২০ শতকে অর্থাৎ শিল্পের যুগে পিছিয়ে ছিলাম , তাই আমাদের অবশ্যই ২১ শতকে অর্থাৎ প্রযুক্তির বিপ্লবের যুগে অন্যান্য দেশের মতো অংশ নিতে হবে তবেই আমরা পৃথিবীতে উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবো ।

আজ আর নয় । পরবর্তী পার্টে আবার দেখা হবে । খোদা হাফেজ।